
❝বিয়ে কি মিথ্যা ছিল?❞ – ইমরান বনাম সাইমা: একটি ব্যর্থ নিকাহনামা বাতিলের মামলা
২০১৯ সাল। এক যুবক, নাম ইমরান, দাবি করলেন—“এই বিয়েটা তো আসলেই হয়নি!” তাঁর অভিযোগ—সেই সময় তার বয়স মাত্র ১৫ বছর, সে নাবালক ছিল। অথচ তার নামে একটা নিকাহনামা রেজিস্ট্রি করা হয়েছে, যেখানে তাকে বিয়ে করানো হয়েছে সাইমা নামের এক তরুণীর সঙ্গে। তার ভাষায়, “এটা ছিল সম্পূর্ণ একটা সাজানো নাটক—আমার কাছ থেকে মোহরানার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র!”
শোনার পর মনে হতে পারে, হয়তো সত্যিই এমন কিছু ঘটেছে। কিন্তু আসুন দেখি, আদালত কী বলেছে।
🎭 মামলার পটভূমি: দুই পক্ষ, দুই গল্প
ইমরানের পক্ষের গল্প ছিল অনেকটা সিনেমার মত। তাঁর দাবি অনুযায়ী, সাইমা নামের সেই নারী তার প্রতি আসক্ত ছিলেন। যখন সে (ইমরান) তাকে প্রত্যাখ্যান করল, তখন সাইমা নাকি প্রতিশোধ নিতে উঠে পড়ে লাগলেন। তার ফলশ্রুতিতে বানানো হলো একটি নকল নিকাহনামা। আর এখন তিনি এই ভুয়া নিকাহনামা বাতিল করতে চান।
অন্যদিকে, সাইমার কাহিনী একেবারেই ভিন্ন। তাঁর মতে, ২০১৯ সালেই তাদের বিয়ে হয়েছিল—উভয় পরিবারের সম্মতিতেই। মোহরানা ধার্য করা হয়েছিল, যার একটি অংশ নগদ প্রদানও করা হয়েছে। বিয়ের পর কিছুদিন সংসার চললেও, ইমরানের পরিবার ধীরে ধীরে আরও যৌতুক দাবি করতে থাকে। চাপে পড়ে একসময় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সালিশি বৈঠকেও কোনো ফলাফল না আসায়, ২০২৩ সালে সাইমা নিজেই তাকে তালাক দেন ।
⚖️ আদালতের পর্যালোচনা
এই মামলায় প্রধান প্রশ্ন ছিল:
“এই বিয়ে আসলেই হয়েছিল কি না?”
ইমরান আদালতে শুধুমাত্র নিজের সাক্ষ্য এবং যে নিকাহনামাটি তিনি বাতিল করতে চাইছিলেন, সেটিই উপস্থাপন করেন। অন্য কোনো প্রত্যক্ষদর্শী বা দলিলপত্র তিনি দেননি যা প্রমাণ করতে পারে যে তিনি ২০১৯ সালে ১৫ বছর বয়সী ছিলেন।
অন্যদিকে, সাইমা নিজে সাক্ষ্য দেন, সঙ্গে আনেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ—নিকাহ রেজিস্ট্রারকেও। রেজিস্ট্রার আদালতে স্বীকার করেন যে, হ্যাঁ, তিনিই এই বিয়ে রেজিস্ট্রি করেছেন উক্ত তারিখে এবং উভয় পক্ষের সম্মতিতেই।
ইমরান বললেও যে সে নাবালক ছিল, কিন্তু কোনো জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, স্কুলের নথিপত্র—কিছুই আনেননি প্রমাণ হিসেবে।

📜 আইন বলছে…
বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, যে ব্যক্তি মামলা দায়ের করেন, তাঁকেই তাঁর দাবির পক্ষে প্রমাণ দিতে হয়। অপর পক্ষ যদি দুর্বলও হয়, তাহলেও মামলার দায়িত্ব প্রমাণ করার থাকে বাদীর কাঁধে।
এই মামলায় বিচারক স্পষ্টভাবে বলেন:
“এই আদালতের সামনে বাদী নিজেই তাঁর দাবির পক্ষে ন্যূনতম বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি।”
ফলে, আদালত মামলাটি খারিজ করে দেন এবং রায় দেন—বিয়ে বৈধভাবেই সম্পন্ন হয়েছিল।
📌 শিক্ষা এবং সামাজিক বার্তা
এই মামলার মধ্য দিয়ে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাই:
- বিয়ে নিয়ে ভুল বা মিথ্যা দাবি আইনসঙ্গত প্রমাণ ছাড়া আদালতে টিকতে পারে না।
- যে কোনো আইনি দাবি, বিশেষ করে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত বিষয়ে, সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া করা উচিত নয়।
- বিচারব্যবস্থা প্রমাণনির্ভর—জন্মনিবন্ধন, সনদ, রেজিস্ট্রি—all these matter.
- কেবল অভিযোগ করলেই আদালত আপনার পক্ষে রায় দেবে না। বরং আদালত খুঁজে দেখবে সত্য কোথায়।
📣ইমরানের নিকাহনামা বাতিলের চেষ্টা ব্যর্থ হলো, কারণ তিনি আইনি দৃষ্টিকোণে নিজেকে প্রমাণ করতে পারলেন না। আর সাইমার মতো নারীরা যদি বাস্তবে এমন অবিচারের শিকার হন, তবে তাদের উচিত যথাযথ আইনি পরামর্শ নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
বিয়ে যেমন একটি পবিত্র সামাজিক চুক্তি, তেমনি এটি একটি আইনি সম্পর্কও। সেই সম্পর্কের শুরু বা শেষ—দুইই হতে হবে যথাযথ প্রক্রিয়ায়, সত্যের ভিত্তিতে।
আপনার অভিমত কী?
আপনি কি মনে করেন আদালতের এই রায় ন্যায়সঙ্গত হয়েছে? আপনার অভিজ্ঞতা থাকলে কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।