
ঢাকার নগরায়ণ ও ভবন নির্মাণ রাজউক কার্যক্রমের মূল আইনগত কাঠামো হলো বাংলাদেশ জাতীয় ভবন নির্মাণ বিধিমালা (BNBC), যা ২০০৬ সালে সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়ে ভবন নির্মাণ আইন, ১৯৫২-এর অধীনে আইনি বাধ্যবাধকতা লাভ করে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (RAJUK) হলো এই বিধিমালার কার্যকর তদারকি ও বাস্তবায়নের প্রধান সংস্থা, যাদের দায়িত্ব শহরের পরিকল্পিত উন্নয়ন ও নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা।
RAJUK কেস: কখন এবং কেন?
যখন কোনো ভবন অনুমোদিত ডিজাইন লঙ্ঘন করে অথবা কোনো অনুমতি ব্যতীত নির্মাণ করা হয়, তখন RAJUK আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করে—যার মধ্যে ভবনের অবৈধ অংশ বা কখনো সম্পূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশও অন্তর্ভুক্ত থাকে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক মালিক রাজউক-এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন—যা ‘RAJUK কেস’ নামে পরিচিত।
ভবন ভাঙার প্রক্রিয়ায় RAJUK-এর ধাপসমূহ:
- লঙ্ঘন শনাক্তকরণ: Rajuk এর নিজস্ব পরিদর্শনের মাধ্যমে অনুমোদনহীন ভবন বা ডিজাইন লঙ্ঘনকারী নির্মাণ চিহ্নিত করে।
- নোটিশ প্রদান: ভবন মালিককে লিখিত নোটিশ দিয়ে তাদের জবাবদিহির সুযোগ দেওয়া হয়।
- শুনানি ও তদন্ত: মালিককে শুনানিতে ডাকা হয়। প্রমাণিত হলে RAJUK কেস পরিণত হয় ভাঙার আদেশে।
- ভাঙার আদেশ: রাজউক ভবনের নির্দিষ্ট অংশ বা পুরো ভবন ভাঙার নির্দেশ দেয়। এতে আপত্তি থাকলে মালিক উচ্চ আদালতে Writ দায়ের করতে পারেন।
- জোরপূর্বক বাস্তবায়ন: মালিক আদেশ না মানলে রাজউক নিজের উদ্যোগে ভবন ভাঙে এবং এই RAJUK কেস গড়ায় উচ্চ আদালত পর্যন্ত।
- ব্যয় পুনরুদ্ধার: রাজউক আইন অনুযায়ী ভবন মালিকের কাছ থেকে ভাঙার খরচ আদায় করতে পারে।
সাম্প্রতিক আপডেট:
২০২৫ সালের এপ্রিলের তথ্যমতে, RAJUK ৩,৩৮২টি নির্মাণাধীন ভবনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং এসব ভবনের ডিজাইন লঙ্ঘনের দায়ে ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এতে RAJUK কেস-এর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে।
RAJUK কেস-এ আইনি প্রতিকারসমূহ
১. Writ Petition (Article 102, Constitution of Bangladesh):
ভবন মালিক যদি মনে করেন রাজউক-এর আদেশ অন্যায় বা সংবিধান পরিপন্থী, তাহলে তিনি হাইকোর্টে রিট আবেদন করতে পারেন।
রিটের ভিত্তি হতে পারে:
- ন্যায্য প্রক্রিয়া লঙ্ঘন
- ক্ষমতার অপব্যবহার
- অসঙ্গত বা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত
- মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন
- অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
২. সিভিল মামলা:
রাজউক যদি গাফিলতি বা বেআইনিভাবে কোনো ভবন ভাঙে, তবে ক্ষতিপূরণ চেয়ে সিভিল কোর্টে মামলা দায়ের করা যায়। সিভিল RAJUK কেস ধীর গতির হলেও অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া সম্ভব।
RAJUK কেস পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা
- সময়মতো পদক্ষেপ: রাজউক-এর নোটিশ অগ্রাহ্য করলে মামলার পক্ষে থাকা কঠিন হয়।
- ডকুমেন্টেশন: অনুমোদিত ডিজাইন, নোটিশ ও পূর্বের যোগাযোগের দলিলপত্র অপরিহার্য।
- আইনজীবীর ভূমিকা: সঠিক আইনি কৌশল নির্ধারণ ও আদালতে কার্যকর উপস্থাপনার জন্য একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা জরুরি।
- আদালতের বিবেচনা: আদালত রাজউক-এর আইনগত কর্তৃত্ব মেনে চলে, তবে যথাযথ প্রমাণে আদালত হস্তক্ষেপ করে।
বাস্তব প্রভাব:
RAJUK-এর চলমান অভিযানে হাজার হাজার ভবন মালিক এখন RAJUK কেস মোকাবিলা করছেন—অনেকেই জানেন না কীভাবে আইনি প্রতিকার নিতে হয়। এতে তাদের সম্পদ, সম্মান ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে।
আইনজীবীর পরামর্শ:
যদি আপনি রাজউক-এর কোনো নোটিশ পান, বিলম্ব না করে দ্রুত কোনো আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করুন এবং আপনার আইনি অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে যথাযথ প্রতিকার গ্রহণ করুন।