The Justice Corner is a leading law firm in Bangladesh, offering specialized legal services to both local and international clients. We serve as trusted advisors to prominent businesses, companies, and banks.

Blog Details

পারিবারিক বিরোধ ও বাল্যবিবাহ আইন বাংলাদেশ

পারিবারিক বিরোধ ও বাল্যবিবাহ আইন বাংলাদেশ

বাংলাদেশে পারিবারিক বিরোধ বলতে বোঝায় — স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা অন্যান্য আত্মীয়দের মধ্যে সম্পত্তি, ভরণপোষণ, বিবাহ, তালাক, হেফাজত, উত্তরাধিকার বা মানসিক নির্যাতন সংক্রান্ত মতবিরোধ

এই ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য রয়েছে Family Court Ordinance, 1985 – যা পারিবারিক বিষয়গুলো আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুযোগ দেয়।

পারিবারিক বিরোধের ধরণ

  • বিবাহ ও তালাক সংক্রান্ত বিরোধ
  • ভরণপোষণ বা দেনমোহর দাবী
  • সন্তানের হেফাজত ও অভিভাবকত্ব
  • উত্তরাধিকার বা সম্পত্তি ভাগাভাগি
  • মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ

পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির উপায় (Family Dispute Resolution Methods)

  1. আলোচনা (Negotiation): পরিবারের সদস্যদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
  2. সালিশ (Mediation/Arbitration): স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, সমাজ নেতা বা সালিশ বোর্ডের মাধ্যমে নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষ সমস্যা সমাধান করে।
  3. পারিবারিক আদালত (Family Court): যদি আলোচনা ও সালিশে সমাধান না হয়, তখন Family Court Ordinance, 1985 অনুযায়ী আদালতে মামলা করা যায়।
  4. আইনজীবীর সহায়তা: আইনি পরামর্শ ও প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে আইনজীবী নিয়োগ করা যেতে পারে।
  5. Alternative Dispute Resolution (ADR): আদালতের বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি (ADR) ব্যবহার করা যায়, যা সময় ও খরচ বাঁচায়।

পারিবারিক আদালতের এখতিয়ার (Jurisdiction of Family Court)

Family Court Ordinance, 1985 অনুযায়ী, পারিবারিক আদালত নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে মামলা গ্রহণ করতে পারে—

মামলা প্রকারউদাহরণ
বিবাহতালাক, বিবাহ বাতিল
ভরণপোষণস্ত্রী বা সন্তানের আর্থিক সহায়তা
দেনমোহরকাবিননামায় নির্ধারিত দেনমোহর দাবী
হেফাজতসন্তানের হেফাজত বা অভিভাবকত্ব নির্ধারণ
দাম্পত্য অধিকারস্ত্রী বা স্বামীকে পুনর্মিলনের আদেশ

সালিশ বোর্ডে অভিযোগ করার নিয়ম

১. ইউনিয়ন পরিষদ বা ওয়ার্ড কাউন্সিলর বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিন।
২. অভিযোগে ঘটনার বিবরণ, পক্ষগুলোর নাম ও যোগাযোগ ঠিকানা উল্লেখ করুন।
৩. চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলর তিন সদস্যের সালিশ বোর্ড গঠন করবেন।
৪. উভয় পক্ষকে নোটিশ পাঠানো হবে।
৫. সালিশের মাধ্যমে সমঝোতা বা সুপারিশমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সময় লাগে: সাধারণত ১৫–৩০ দিনের মধ্যে সালিশ সম্পন্ন হয়।

পারিবারিক বিরোধের জন্য কোর্টে যেতে হয় কি?

সব ক্ষেত্রে নয়।
প্রথমে সালিশ বা পারিবারিক আলোচনা চেষ্টা করা হয়।
যদি তাতে সমাধান না হয়, তখনই Family Court-এ মামলা করা হয়।

পারিবারিক বিরোধ সমাধানের ৫টি কার্যকর উপায় (5 Ways to Resolve Family Conflict)

  • শান্তভাবে আলোচনা করা
  • সমঝোতার মনোভাব রাখা
  • তৃতীয় পক্ষ বা মধ্যস্থতাকারী যুক্ত করা
  • আইনি পরামর্শ নেওয়া
  • ধৈর্য ও সম্মানের মাধ্যমে সমস্যা মোকাবিলা করা

 

বাল্যবিবাহ আইন বাংলাদেশ (Child Marriage Law in Bangladesh)

বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কার্যকর আইন হলো
“বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭” (Child Marriage Restraint Act, 2017)

আইনের মূল উদ্দেশ্য:

১৮ বছরের নিচে মেয়েদের ও ২১ বছরের নিচে ছেলেদের বিয়ে রোধ করা।

আইনে বাল্যবিবাহের সংজ্ঞা

“যে বিবাহে মেয়ের বয়স ১৮ বছরের নিচে বা ছেলের বয়স ২১ বছরের নিচে থাকে, সেটি বাল্যবিবাহ।”

নাবালক বিয়ে করলে কী শাস্তি হয়?

অপরাধীশাস্তি
বিবাহ সম্পন্নকারী বরসর্বোচ্চ ২ বছর জেল বা ১ লক্ষ টাকা জরিমানা
অভিভাবক বা সহযোগী৬ মাস জেল বা ৫০,০০০ টাকা জরিমানা
কাজী বা নিবন্ধক২ বছর জেল বা লাইসেন্স বাতিল
উপস্থিত সাক্ষীআইনি জবাবদিহিতার আওতায় আসতে পারেন

কিভাবে অভিযোগ করবেন?

  1. স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (UNO) বা পুলিশ স্টেশন এ লিখিত অভিযোগ করা যায়।
  2. এছাড়া হেল্পলাইন ১০৯ বা জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি তে যোগাযোগ করতে পারেন।
  3. নাবালক বিয়ে বন্ধ করার ক্ষমতা আছে স্থানীয় প্রশাসনের (UNO বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট)।

 

“বিশেষ পরিস্থিতি” ধারা – বিতর্কিত অংশ

আইনের ধারা ১৯(১) অনুযায়ী, আদালত চাইলে “বিশেষ পরিস্থিতিতে” ১৮ বছরের নিচের মেয়ের বিয়ে অনুমোদন দিতে পারে।
তবে এর জন্য—

  • উভয় পক্ষের অভিভাবকের আবেদন,
  • আদালতের অনুমতি, এবং
  • মেয়ের সর্বোত্তম স্বার্থে হতে হবে।

এই ধারা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সমালোচনামূলক অবস্থান নিয়েছে, কারণ এটি বাল্যবিবাহের সুযোগ তৈরি করে।

সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

প্রশ্ন ১: ১৮ বছরের নিচে বিয়ে করলে কি বিবাহ বৈধ?
উত্তর: না, এটি আইনে নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

প্রশ্ন ২: বাল্যবিবাহ রেজিস্টার করলে কি বৈধ হয়ে যায়?
উত্তর: না, রেজিস্ট্রেশন করলেও তা অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য।

প্রশ্ন ৩: সালিশ বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাধ্যতামূলক কি?
উত্তর: না, এটি সমঝোতামূলক। সমাধান না হলে আদালতে যাওয়া যায়।

প্রশ্ন ৪: Family Court-এ মামলা করতে কত সময় লাগে?
উত্তর: সাধারণত ৩–৬ মাস, তবে মামলার জটিলতার ওপর নির্ভর করে।

প্রশ্ন ৫: বাল্যবিবাহের অভিযোগ করলে মেয়েকে কোথায় আশ্রয় দেওয়া হয়?
উত্তর: স্থানীয় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বা নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে (Safe Shelter Home) রাখা হয়।

উপসংহার

পারিবারিক বিরোধ ও বাল্যবিবাহ – দুটোই সামাজিক ও আইনি দৃষ্টিকোণে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বিরোধ মীমাংসায় ধৈর্য, সমঝোতা ও আইনি সচেতনতা অপরিহার্য। অন্যদিকে, বাল্যবিবাহ বন্ধ করা শুধু আইনি নয়, মানবিক দায়িত্বও। শিশুদের অধিকার ও নারীর মর্যাদা রক্ষায় সচেতনতা এবং আইন প্রয়োগই পারে পরিবারে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে।