The Justice Corner is a leading law firm in Bangladesh, offering specialized legal services to both local and international clients. We serve as trusted advisors to prominent businesses, companies, and banks.

Blog Details

বাংলাদেশে বিদেশিদের জমি কেনার নিয়ম ও আইনি প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে বিদেশিদের জমি কেনার নিয়ম ও আইনি প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে কোনো বিদেশি নাগরিক নিজ নামে সরাসরি জমির মালিকানা নিবন্ধন করতে পারেন না, যদি না সেই হস্তান্তরটি দেশের সম্পত্তি আইন ও বিনিয়োগ আইনের আওতায় বৈধ হয়। সাধারণত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোনো কোম্পানির নামে জমি ক্রয় করে থাকেন। অর্থাৎ, জমির মালিকানা হয় বাংলাদেশে নিবন্ধিত কোম্পানির নামে, যেটির মালিক বিদেশি বিনিয়োগকারী।

বাংলাদেশে বিদেশিদের জমি নিবন্ধনের আইনি কাঠামো:
এক্ষেত্রে প্রধানত দুটি দিক বিবেচনা করা হয়—
১. সম্পত্তি ও ভূমি সংক্রান্ত আইন:

  • Transfer of Property Act, 1882
  • Registration Act, 1908
  • Land Development Tax Ordinance, 1976
  • Land Holding Limitation Order, 1972

২. বিদেশি বিনিয়োগ নীতি ও অনুমোদন:

  • Foreign Private Investment (Promotion and Protection) Act, 1980
  • বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) নির্দেশিকা
  • EPZ, EZ ও Hi-Tech Park-এর বিশেষ বিধান

আবশ্যক অনুমোদন ও প্রমাণপত্র:
BIDA অনুমোদন: BIDA হলো বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এটি প্রকল্প নিবন্ধন, জমি ব্যবহারের অনুমতি, ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিটসহ বিভিন্ন অনুমোদন প্রদান করে। জমি ক্রয় বা লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে সাব-রেজিস্ট্রার সাধারণত BIDA অনুমোদনের কপি দেখতে চান।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমতি: কৃষিজমি বা খাস জমি কিনতে হলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমোদন বা লিজ অর্ডার প্রয়োজন হয়। সরকারী অনুমতি ছাড়া এসব জমি সাধারণত বিদেশি ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত নয়।

করপোরেট নিবন্ধন (RJSC): যদি জমির ক্রেতা কোনো কোম্পানি হয় (যা সাধারণত হয়ে থাকে), তবে সেই কোম্পানিকে অবশ্যই বাংলাদেশে Companies Act, 1994 অনুযায়ী নিবন্ধিত হতে হবে। জমি নিবন্ধনের সময় সাব-রেজিস্ট্রার অফিস কোম্পানির Incorporation Certificate, Memorandum & Articles of Association, এবং বোর্ড রেজোলিউশন যাচাই করে নেন। এটি প্রমাণ করে যে কোম্পানিটি আইনত বৈধভাবে গঠিত এবং তার পরিচালনা পর্ষদ জমি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে।

ভূমি সীমা আইন (Land Ceiling): জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে Land Holding Limitation Order, 1972 অনুযায়ী নির্ধারিত সীমার মধ্যে জমি ক্রয় করতে হবে। জমির নামজারি বা মিউটেশন প্রক্রিয়ার আগে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জমি সীমা আইন মেনে চলার একটি ঘোষণা (Land Ceiling Compliance Declaration) জমা দিতে হয়। এই ঘোষণা না থাকলে জমির মালিকানা নামজারি সাধারণত সম্পন্ন হয় না।

কর ও ফি: জমি নিবন্ধনের আগে ক্রেতাকে একটি বাংলাদেশি TIN (Taxpayer Identification Number) নিতে হয় এবং সম্পত্তির মূল্যের ওপর ১.৫% স্ট্যাম্প ডিউটি ও প্রযোজ্য নিবন্ধন ফি পরিশোধ করতে হয়। পাশাপাশি জমির সমস্ত Land Development Tax (ভূমি উন্নয়ন কর) বকেয়া থাকলে তা পরিশোধ করতে হয়, নইলে মিউটেশন প্রক্রিয়া স্থগিত থাকে।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাস্তবিক ধাপসমূহ: 

প্রথমে বিনিয়োগের ধরন নির্ধারণ করতে হবে — স্থানীয়ভাবে একটি কোম্পানি গঠন করা (সবচেয়ে প্রচলিত উপায়) অথবা BIDA থেকে শাখা/লিয়াজোঁ অফিসের অনুমোদন নেওয়া (যদিও এটি সাধারণত জমির মালিকানার জন্য ব্যবহৃত হয় না)। এরপর BIDA-এর মাধ্যমে প্রকল্প নিবন্ধন ও জমি ব্যবহারের অনুমোদন নিতে হয়। যদি জমিটি কৃষি বা খাস জমি হয়, তবে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হবে।

সব অনুমোদন সম্পন্ন হলে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে বিক্রয় বা লিজ দলিল নিবন্ধন করতে হয়, এবং সঙ্গে জমা দিতে হয় BIDA অনুমোদনপত্র, RJSC কোম্পানির নথি, ও জমি সীমা মেনে চলার ঘোষণা। এরপর নির্ধারিত স্ট্যাম্প ডিউটি ও নিবন্ধন ফি প্রদান করে, শেষ ধাপে AC-Land অফিসে নামজারি (mutation) করতে হয় নিবন্ধিত দলিল, ট্যাক্স রশিদ ও অনুমোদনপত্রসহ।

এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আইনগতভাবে বাংলাদেশে জমি ক্রয় বা লিজ গ্রহণ করতে পারেন এবং তাদের বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকে।