মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাংলাদেশ ২০২৫
ভূমিকা
বাংলাদেশে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন (Muslim Inheritance Law in Bangladesh) ইসলামী শরিয়াহ ও দেশের সিভিল আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এটি মূলত কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস ভিত্তিক একটি উত্তরাধিকার ব্যবস্থা, যেখানে প্রতিটি উত্তরাধিকারী নির্দিষ্ট হারে সম্পত্তির অংশ পান। এই আইনের উদ্দেশ্য হলো ন্যায্য বণ্টন ও পারিবারিক সম্প্রীতি রক্ষা করা।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন কীভাবে কাজ করে?
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টনের আগে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়:
- কাফন-দাফনের খরচ পরিশোধ
- বাকি দেনা বা ঋণ শোধ করা
- বৈধ উইল (wasiyyah) কার্যকর করা – মোট সম্পত্তির ১/৩ অংশ পর্যন্ত বৈধ উইল করা যায়।
- অবশিষ্ট সম্পত্তি ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন করা
মুসলিম উত্তরাধিকারীদের শ্রেণিবিন্যাস
ইসলামী আইনে উত্তরাধিকারীরা তিন ভাগে বিভক্ত:
| শ্রেণি | বর্ণনা | উদাহরণ |
|---|---|---|
| আসাবা (Agnatic heirs) | নিকট আত্মীয় যারা পুরুষ লাইন থেকে আসে | ছেলে, ভাই, চাচা |
| জুল ফারাইজ (Sharers) | নির্দিষ্ট হারে অংশ পাওয়া উত্তরাধিকারী | স্ত্রী, মা, মেয়ে |
| জুল আরহাম (Distant kindred) | দূর সম্পর্কের আত্মীয় (যদি নিকট উত্তরাধিকারী না থাকে) | নাতি, মামা, ফুফু |
ভাই-বোনদের জমি ভাগ কিভাবে হয়?
যদি বাবা মারা যান এবং তার সম্পত্তি রেখে যান, তবে ছেলে ও মেয়ে উভয়ই উত্তরাধিকারী।
কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী:
“পুরুষের জন্য দুই নারীর সমান অংশ।”
(সূরা আন-নিসা, আয়াত ১১)
অর্থাৎ,
- ১ ছেলে = ২ অংশ
- ১ মেয়ে = ১ অংশ
উদাহরণ:
বাবা মারা গেছেন, রেখে গেছেন ১ ছেলে ও ১ মেয়ে।
মোট ৩ অংশে জমি ভাগ হবে।
- ছেলে পাবে ২ অংশ
- মেয়ে পাবে ১ অংশ
দাদার সম্পত্তিতে নাতির অধিকার আছে কি?
সাধারণভাবে, যদি দাদার ছেলে (অর্থাৎ নাতির বাবা) জীবিত থাকেন, তাহলে নাতি দাদার সরাসরি উত্তরাধিকারী নয়।
তবে, যদি ছেলে (অর্থাৎ নাতির বাবা) দাদার আগে মারা যান, তাহলে কিছু ইসলামী মাযহাবে নাতি দাদার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হতে পারেন।
বাংলাদেশে আদালত সাধারণত সুন্নি হানাফি মাযহাব অনুসারে সিদ্ধান্ত দেয়, যেখানে নাতির অধিকার থাকে না যদি তার বাবা জীবিত থাকে।
মেয়েদের উত্তরাধিকার অধিকার কত?
মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার ইসলামী শরিয়াতে নির্ধারিত এবং তা সমান মর্যাদার ভিত্তিতে ন্যায্য।
নিচে কয়েকটি সাধারণ পরিস্থিতি দেওয়া হলো:
| সম্পর্ক | অংশ |
|---|---|
| শুধুমাত্র ১ মেয়ে | মোট সম্পত্তির ½ (অর্ধেক) |
| ২ বা ততোধিক মেয়ে (কোনো ছেলে নেই) | মোট সম্পত্তির ⅔ (দুই-তৃতীয়াংশ) |
| ছেলে ও মেয়ে উভয় থাকলে | ছেলে পাবে ২ অংশ, মেয়ে ১ অংশ |
উদাহরণ:
বাবার ৬০ শতক জমি আছে।
২ ছেলে ও ১ মেয়ে থাকলে মোট ভাগ হবে ৫ অংশে:
- প্রতিটি ছেলে পাবে ২ অংশ (২৪ শতক করে)
- মেয়ে পাবে ১ অংশ (১২ শতক)
বাবার সম্পত্তি বণ্টন আইন বাংলাদেশ ২০২৪
বাংলাদেশে Muslim Family Laws Ordinance 1961 এবং Muslim Personal Law (Shariat) Application Act 1937 অনুযায়ী মুসলমানদের উত্তরাধিকার নির্ধারিত হয়।
২০২৪ সালে কোনো বড় আইনি পরিবর্তন না হলেও, ডিজিটাল রেকর্ড, ভূমি খতিয়ান ও অনলাইন মিউটেশন প্রক্রিয়া এখন অনেক সহজ হয়েছে।
তাই ওয়ারিশগণ সহজে জমি ভাগ বা রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে পারেন।
ওয়ারিশান অনুযায়ী জমি ভাগ করার নিয়ম
- মৃত ব্যক্তির নামের খতিয়ান ও দাখিলা সংগ্রহ করুন
- ওয়ারিশদের নামসহ ওয়ারিশ সার্টিফিকেট (Succession Certificate) নিন
- জমি পরিমাপ ও ভাগ করে মিউটেশন (mutation) আবেদন করুন
- প্রয়োজনে মৌখিক চুক্তি লিখিত করুন (deed of partition)
- সকল ওয়ারিশের স্বাক্ষর ও সম্মতি নিশ্চিত করুন
উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনি সহায়তা
যদি কোনো ওয়ারিশ জমি দখল করে রাখে বা বণ্টনে বাধা দেয়, তাহলে Family Court বা Assistant Judge Court-এ মামলা করা যায়।
এছাড়াও, Union Parishad বা AC Land অফিসে আপত্তি দাখিল করা যায় খতিয়ান সংশোধনের জন্য।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন মূলত ন্যায়, সমতা ও পরিবারিক ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য প্রণীত।
প্রতিটি মুসলমানের উচিত মৃত্যুর পর সম্পত্তি বণ্টনের বিষয়ে শরিয়াহনুগ ও আইনসম্মত উপায়ে কাজ করা — যাতে ভবিষ্যতে পারিবারিক বিরোধ এড়ানো যায়।
