The Justice Corner is a leading law firm in Bangladesh, offering specialized legal services to both local and international clients. We serve as trusted advisors to prominent businesses, companies, and banks.

Blog Details

বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি সমাপ্তির আইনগত নিয়ম ও করণীয়

বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি সমাপ্তির আইনগত নিয়ম ও করণীয়

কোনো নিয়োগকর্তা কি ইচ্ছামতো কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করতে পারেন?

না, কোনো নিয়োগকর্তা ইচ্ছামতো বা স্বেচ্ছাচারিতাভাবে কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করতে পারেন না।
Termination simpliciter বলতে বোঝায় এমন চাকরিচ্যুতি যেখানে কোনো অসদাচরণের (misconduct) অভিযোগ আনা হয় না। এটি সাধারণত বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ২৬ ধারার অধীনে করা হয়, যেখানে আইন অনুযায়ী নোটিশ বা নোটিশের পরিবর্তে বেতন ও অন্যান্য প্রাপ্য সুবিধা প্রদান করা হয়। এই ধরনের চাকরিচ্যুতি “সাধারণ অবসান” নামে পরিচিত। এটি ধারা ২৩ অনুযায়ী বরখাস্ত (dismissal) থেকে আলাদা, কারণ বরখাস্ত অসদাচরণের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

তবে, Termination simpliciter তখনই বৈধ হবে, যখন এটি সৎ উদ্দেশ্যে, সুষ্ঠুভাবে এবং আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী সম্পূর্ণভাবে পালন করা হয়। যদি এটি শাস্তি দেওয়ার ছলে, প্রতিশোধমূলকভাবে বা আইনি শর্ত না মেনে করা হয়, তবে আদালত একে অবৈধ ঘোষণা করতে পারে এবং কর্মচারীকে পুনর্বহাল বা ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ দিতে পারে।

একজন অফিসার চাকরিচ্যুত হলে তার করণীয়

একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিসার চাকরিচ্যুত হলে তিনি পারেন—

  • শ্রম আদালতে (Labour Court) ৬ মাসের মধ্যে অভিযোগ দায়ের করতে,
  • চাকরিতে পুনর্বহাল ও বকেয়া বেতন দাবি করতে বা ক্ষতিপূরণ চাইতে,
  • যদি তিনি শ্রম আইনের আওতায় না পড়েন, তবে সিভিল কোর্টে চুক্তিভঙ্গজনিত ক্ষতিপূরণ দাবি করতে,
  • Labour Appellate Tribunal-এ আপিল করতে যদি শ্রম আদালতের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হন।

স্থায়ী কর্মীকে চাকরিচ্যুত করতে হলে নিয়োগকর্তাকে অবশ্যই লিখিত নোটিশ দিতে হবে। যদি কর্মী মাসিক বেতনভুক্ত হন, তবে ১২০ দিনের নোটিশ দিতে হবে; অন্য কর্মীদের ক্ষেত্রে ৬০ দিনের নোটিশ প্রযোজ্য। নিয়োগকর্তা চাইলে নোটিশের পরিবর্তে সমপরিমাণ বেতন প্রদান করেও চাকরিচ্যুতি করতে পারেন, যা আইনত বৈধ। চাকরি শেষ হলে স্থায়ী কর্মী প্রতি পূর্ণ বছরের জন্য ৩০ দিনের মজুরি বা গ্র্যাচুইটি—যেটি বেশি—তা পাওয়ার অধিকারী থাকবেন।

বাংলাদেশের আদালতগুলো ধারাবাহিকভাবে রায় দিয়েছে যে, যদিও শ্রম আইন ২০০৬-এর ধারা ২৬ অনুসারে “সাধারণ চাকরিচ্যুতি” (termination simpliciter) বৈধভাবে করা যেতে পারে, তবে এটি অসৎ উদ্দেশ্যে, প্রতিশোধমূলকভাবে বা শাস্তিমূলকভাবে ব্যবহার করা যাবে না। যদি দেখা যায় যে চাকরিচ্যুতির আড়ালে প্রকৃতপক্ষে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্য রয়েছে, তবে তা অবৈধ বলে গণ্য হবে।

একজন কর্মী নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে এ ধরনের চাকরিচ্যুতি আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন (শ্রম আইন ধারা ৩৩(৯)):
১) যদি চাকরিচ্যুতি তার ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের কারণে করা হয়,
২) যদি এটি খারাপ উদ্দেশ্য (mala fide) বা প্রতিশোধমূলক কারণে করা হয়, এবং
৩) যদি আইন অনুযায়ী নোটিশ, বেতন বা ক্ষতিপূরণ যথাযথভাবে প্রদান না করা হয়।

উল্লেখযোগ্য মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে Janata Bank vs. Abdur Rahim (43 DLR 166)—যেখানে অসদাচরণের অভিযোগ আড়াল করে করা চাকরিচ্যুতি অবৈধ ঘোষণা করা হয়। একইভাবে, Biman Bangladesh Airlines vs. Rabeya Khatun (49 DLR 447) মামলায় আদালত রায় দেন যে, যদি অসদাচরণই চাকরিচ্যুতির প্রকৃত কারণ হয়, তবে শৃঙ্খলাভঙ্গ তদন্ত বাধ্যতামূলক; তা না হলে চাকরিচ্যুতি অবৈধ বলে গণ্য হবে। এ ধরনের চাকরিচ্যুতি চ্যালেঞ্জ করার জন্য শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করতে হয় চাকরিচ্যুতির তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে। তবে তার আগে কর্মীকে ৩০ দিনের মধ্যে নিয়োগকর্তাকে লিখিত অভিযোগ জানাতে হবে (শ্রম আইন, ধারা ৩৩)। নিয়োগকর্তা যদি সন্তোষজনক সমাধান না দেন, তখন কর্মী আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন।

শ্রম আদালতের প্রতিকারসমূহ

যদি আদালত মনে করে চাকরিচ্যুতি অবৈধ, তবে—

  • কর্মীকে চাকরিতে পুনর্বহাল করতে পারে,
  • বা ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ করতে পারে,
  • এছাড়া গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, ছুটির বেতন, অন্যান্য প্রাপ্য সুবিধা প্রদানের নির্দেশ দিতে পারে,
  • শাস্তিমূলক বরখাস্তকে ডিসচার্জ হিসেবে রূপান্তর করতে পারে যাতে কর্মীর কলঙ্ক দূর হয়।

চাকরিচ্যুত কোনো কর্মীর প্রথম করণীয় হলো নিজের চাকরিচ্যুতির সঙ্গে সম্পর্কিত সব প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করা। এর মধ্যে নিয়োগপত্র, চাকরির নিয়মাবলি, চাকরিচ্যুতি চিঠি, বেতন স্লিপ, উপস্থিতির রেকর্ড ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এরপর এসব নথি ভালোভাবে পর্যালোচনা করতে হবে—নোটিশ দেওয়া হয়েছে কি না বা তার পরিবর্তে বেতন প্রদান করা হয়েছে কি না, চাকরিচ্যুতির আগে কোনো তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে কি না, এবং প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ বা সুবিধা যথাযথভাবে দেওয়া হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। যদি দেখা যায় যে চাকরিচ্যুতি প্রক্রিয়ায় আইন লঙ্ঘন বা অন্যায় হয়েছে, তাহলে কর্মীকে প্রথমে ৩০ দিনের মধ্যে নিয়োগকর্তাকে লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে হবে। নিয়োগকর্তা যদি কোনো সমাধান না দেন, তাহলে চাকরিচ্যুতির তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে শ্রম আদালতে মামলা করা যাবে। সেখানে কর্মী চাকরিতে পুনর্বহালসহ বকেয়া বেতন বা ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য প্রাপ্য সুবিধা আদায়ের আবেদন করতে পারেন।

বাংলাদেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মচারীরা সাধারণত বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩ ও ২০১৮)-এর আওতায় পড়েন, তবে শর্ত হলো তারা যেন মূলত ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনিক পদে না থাকেন। শ্রম আইন ধারা ২(৬৫) অনুযায়ী, যিনি প্রধানত ব্যবস্থাপনাগত বা প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত, তিনি ‘কর্মী’ হিসেবে গণ্য হন না। অর্থাৎ, যদি কোনো ব্যাংক কর্মীর মূল দায়িত্ব হয় নীতিনির্ধারণ, কর্মী নিয়োগ, শাস্তি প্রদান, বা বাজেট ও অর্থ ব্যবস্থাপনা, তাহলে তিনি শ্রম আইনের আওতায় পড়বেন না। কিন্তু যদি তার কাজ ব্যাংকের দৈনন্দিন কার্যক্রম, ক্লারিক্যাল কাজ বা গ্রাহকসেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে তিনি ‘কর্মী’ হিসেবে গণ্য হবেন এবং শ্রম আইনের সুরক্ষা পাবেন।

এই বিষয়ে আদালতের বিভিন্ন রায়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। Mujibur Rahman vs. Chairman, Labour Court (31 DLR 301) মামলায় আদালত রায় দেন যে, কেউ সুপারভাইজার হলেও যদি তার কাজ মূলত ক্লারিক্যাল প্রকৃতির হয়, তবে তিনি কর্মী হিসেবে বিবেচিত হবেন। Janata Bank vs. Abdur Rahim (43 DLR 166) মামলায় আদালত উল্লেখ করেন যে, কর্মীর পদবি নয়, বরং কাজের প্রকৃতি ও দায়িত্বের ভিত্তিতে তার অবস্থান নির্ধারিত হবে। এছাড়া Nazrul Islam Patwary vs. Rupali Bank মামলায় আদালত বলেন, কালেকশন এজেন্টের কোনো ব্যবস্থাপনাগত ক্ষমতা না থাকায় তাকে কর্মী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এসব রায় থেকে স্পষ্ট হয় যে ব্যাংক কর্মচারীর শ্রম আইনের আওতায় পড়া নির্ভর করে তার কাজের প্রকৃতি ও বাস্তব দায়িত্বের ওপর।

আদালতের নির্ধারিত মূল পরীক্ষা (Tests)

নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আদালত বিবেচনা করে—

  • ব্যক্তি কি নীতিগত বা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীন ক্ষমতা রাখেন?
  • তিনি কি অন্য কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করেন বা তাদের শাস্তি/নিয়োগ দিতে পারেন?
  • বাজেট বা অর্থ ব্যবস্থাপনায় কি ক্ষমতা আছে?
  • তিনি কি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে বাহ্যিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করেন?
  • কাজের বেশিরভাগ সময় কি ব্যবস্থাপনাগত বা প্রশাসনিক কাজে ব্যয় হয়?

➡️ যদি হ্যাঁ — তিনি ব্যবস্থাপনাগত, তাই শ্রম আইনের “কর্মী” নন।
➡️ যদি না — তিনি মূলত অপারেশনাল/ক্লারিক্যাল কর্মী, তাই শ্রম আইনের আওতায় সুরক্ষিত।

কর্মী নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয় হলো তার কাজের প্রকৃতি, পদবি নয়। বাংলাদেশ শ্রম আইনের দৃষ্টিতে যিনি দক্ষ, অদক্ষ, কারিগরি বা ক্লারিক্যাল ধরনের কাজের জন্য নিয়োজিত, তিনি “কর্মী” হিসেবে গণ্য হবেন। যেমন—ব্যাংকের একজন সহকারী ক্যাশিয়ার বা টেলার, যিনি নিয়মিত অফিসের ক্লারিক্যাল কাজ করেন, তিনি শ্রম আইনের আওতায় একজন কর্মী।

অন্যদিকে, যিনি প্রধানত ব্যবস্থাপনাগত বা প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত—যেমন নীতিনির্ধারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কর্মী নিয়োগ, শাস্তি প্রদান বা বাজেট ব্যবস্থাপনার মতো কাজ করেন—তিনি “কর্মী” নন।

অর্থাৎ, একজন ব্যক্তির আইনগত মর্যাদা তার পদবি নয়, বরং কাজের প্রকৃতি ও দায়িত্বের ওপর নির্ভর করে। কোনো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণভাবে “অফিসার”, “এক্সিকিউটিভ” বা “ম্যানেজার” হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস করা হলেও, তা কেবল প্রশাসনিক সুবিধার জন্য করা হয়; শ্রম আইনের সংজ্ঞা নির্ধারণে এসব উপাধির কোনো আইনি প্রভাব নেই। তাই একজন কর্মী শ্রম আইনের সুরক্ষা পাবেন কি না, তা নির্ধারিত হবে তার বাস্তব কাজের ধরন, দায়িত্ব ও অবস্থান অনুযায়ী।