The Justice Corner is a leading law firm in Bangladesh, offering specialized legal services to both local and international clients. We serve as trusted advisors to prominent businesses, companies, and banks.

Blog Details

জমির খতিয়ান অনলাইনে কিভাবে চেক করবেন?

জমির খতিয়ান অনলাইনে কিভাবে চেক করবেন?

বাংলাদেশে জমি কেনা-বেচা বা উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা প্রমাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি হলো জমির খতিয়ান। খতিয়ান ছাড়া জমির মালিকানা প্রমাণ করা বা নিবন্ধন সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। আগে এই খতিয়ান বের করতে ভূমি অফিসে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু বর্তমানে সরকার চালু করেছে  sattlement.gov.bd  নামক একটি অনলাইন সেবা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে কয়েক মিনিটেই জমির খতিয়ান চেক করা সম্ভব। এই নিবন্ধে আমি আপনাকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করব খতিয়ান কী, কেন প্রয়োজন, অনলাইনে কীভাবে খুঁজে পাওয়া যায়, এবং কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে তার সমাধান কীভাবে করবেন।

খতিয়ান কী এবং কেন প্রয়োজন?

খতিয়ান মূলত জমির মালিকানা এবং জমির বিস্তারিত তথ্যের লিখিত প্রমাণপত্র। সরকারের রেকর্ড অফিস থেকে প্রস্তুত করা এই নথিতে একটি নির্দিষ্ট মৌজায় কোন জমির দাগ নম্বর কী, মালিক কে, জমির পরিমাণ কতটুকু এবং জমির শ্রেণি কী তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। জমির প্রকৃত মালিকানা প্রমাণের ক্ষেত্রে খতিয়ানের গুরুত্ব অপরিসীম। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি জমি কিনতে চান তবে বিক্রেতা প্রকৃত মালিক কিনা তা যাচাই করার জন্য খতিয়ান দেখা বাধ্যতামূলক। আবার জমি উত্তরাধিকার সূত্রে ভাগাভাগি করার সময়ও সঠিক খতিয়ান প্রয়োজন হয়। জমির নিবন্ধন প্রক্রিয়ায়ও খতিয়ান ছাড়া এগোনো যায় না। এমনকি ব্যাংক থেকে কৃষি ঋণ বা গৃহঋণ নিতে গেলেও ব্যাংক জমির খতিয়ান দেখতে চায়। খতিয়ান না থাকলে বা ভুল খতিয়ান থাকলে মামলা-মোকদ্দমার ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই জমির প্রকৃত মালিকানা নিশ্চিত করতে হলে খতিয়ান আগে দেখা ছাড়া উপায় নেই।

জমির দলিল যাচাই করার নিয়ম ও প্রয়োজনীয় তথ্য
জমির নামজারি করার নিয়ম (২০২৫ আপডেট)
জমির দখল হলে করণীয় ও মামলা করার পদ্ধতি
জমির সঠিক পরিমাপ কিভাবে করবেন (সরকারি পদ্ধতিতে)
জমির মালিকানা অনলাইনে কিভাবে যাচাই করবেন?
জমি সংক্রান্ত মামলা করার নিয়ম এবং খরচ (২০২৫)
জমির খাজনা কিভাবে অনলাইনে দেবেন?

জমির খতিয়ান চেক করার জন্য যা যা লাগবে

অনলাইনে খতিয়ান খুঁজে বের করার আগে আপনার কাছে কিছু মৌলিক তথ্য থাকতে হবে। প্রথমেই জমিটি কোন জেলায় এবং কোন উপজেলার মধ্যে অবস্থিত তা জানতে হবে। এরপর জমির মৌজার নাম জানা থাকতে হবে, কারণ মৌজা ছাড়া কোনো খতিয়ান সার্চ করা যায় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো দাগ নম্বর। এই নম্বর ছাড়া জমি সঠিকভাবে খুঁজে পাওয়া কঠিন। যদি আপনার কাছে খতিয়ান নম্বর আগে থেকেই জানা থাকে তবে সেটিই সবচেয়ে সহজ উপায় খতিয়ান বের করার। অনেক সময় নাম দিয়েও খতিয়ান খোঁজা যায়, তবে একই নামে একাধিক ব্যক্তি থাকলে সেক্ষেত্রে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তাই নামের পাশাপাশি দাগ নম্বর জানা থাকলে অনুসন্ধান অনেক সহজ হয়ে যায়। সবশেষে, মালিকের নাম জানা থাকলে কিছু ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা যায়। এই তথ্যগুলো থাকলেই অনলাইনে কয়েক মিনিটের মধ্যেই খতিয়ান চেক করা সম্ভব।

অনলাইনে খতিয়ান চেক করার ধাপ (Step-by-Step)

সরকারি ওয়েবসাইট  sattlement.gov.bd থেকে খতিয়ান বের করার জন্য প্রথমে আপনাকে ব্রাউজারে গিয়ে ওয়েবসাইটটি ওপেন করতে হবে। এরপর হোমপেজে প্রবেশ করলে “খতিয়ান অনুসন্ধান” নামে একটি অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে ক্লিক করলে জেলা, উপজেলা এবং মৌজা নির্বাচন করার জন্য একটি ফর্ম আসবে। সঠিক জেলা, উপজেলা ও মৌজা নির্বাচন করার পর আপনাকে খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর বা মালিকের নামের মধ্যে যেকোনো একটি দিয়ে অনুসন্ধান করতে হবে। যদি আপনার কাছে দাগ নম্বর থাকে তবে সেটি ব্যবহার করাই উত্তম, কারণ এতে নির্দিষ্ট খতিয়ান দ্রুত পাওয়া যায়। নাম দিয়ে খুঁজলে একই নামের একাধিক মালিকের রেকর্ড আসতে পারে, যা বিভ্রান্তি তৈরি করে। সঠিক তথ্য দিলে সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে খতিয়ান চলে আসবে এবং আপনি চাইলে সেটি প্রিন্ট বা পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করে রাখতে পারবেন।

খতিয়ান খোঁজার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো দাগ নম্বর দিয়ে অনুসন্ধান করা। কারণ মৌজা এবং দাগ নম্বর একসাথে দিলে নির্দিষ্ট জমির খতিয়ান আলাদা করে বের হয়ে আসে। এভাবে অনলাইনে পাওয়া তথ্য আপনি চাইলে জমির লেনদেন, প্রাথমিক যাচাই বা অন্যান্য কাজে ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, অনলাইনে দেখা খতিয়ান তথ্যের জন্য হলেও মালিকানার আইনি প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই অফিস থেকে সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে হবে।

সাধারণ সমস্যাগুলো ও সমাধান

অনলাইনে খতিয়ান চেক করার সময় অনেকেই কিছু সাধারণ সমস্যার মুখোমুখি হন। উদাহরণস্বরূপ, অনেক সময় দেখা যায় নির্দিষ্ট কোনো মৌজা ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর কারণ হলো দেশের সব মৌজা এখনও  sattlement.gov.bd  তে যুক্ত হয়নি। সেক্ষেত্রে আপনাকে স্থানীয় ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। আবার অনেক সময় নাম দিয়ে খোঁজার কারণে একই নামে একাধিক খতিয়ান চলে আসে, তখন বিভ্রান্তি এড়াতে দাগ নম্বর ব্যবহার করাই উত্তম। কখনও কখনও ওয়েবসাইট সার্ভার ব্যস্ত থাকায় লোড হয় না, তখন কিছুক্ষণ পরে আবার চেষ্টা করলে সাধারণত সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।

কিছু ক্ষেত্রে অনলাইনে প্রদর্শিত খতিয়ান ভুল দেখা দিতে পারে। তখন সংশ্লিষ্ট AC Land অফিসে গিয়ে রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করতে হয়। প্রিন্ট বা ডাউনলোড না হওয়ার সমস্যাও অনেক সময় দেখা দেয়, যা সাধারণত ব্রাউজার পরিবর্তন করলে বা মোবাইলের পরিবর্তে কম্পিউটার ব্যবহার করলে সমাধান হয়ে যায়। মূলত এই সমস্যাগুলো অস্থায়ী এবং সঠিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমাধান পাওয়া সম্ভব।

FAQ

১. খতিয়ান চেক করতে টাকা লাগে কি?
অনলাইনে খতিয়ান দেখা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। তবে অফিস থেকে সার্টিফাইড কপি নিতে চাইলে নির্ধারিত সরকারি ফি প্রদান করতে হয়।
২. অনলাইনে খতিয়ান বের করার নিয়ম কী?
sattlement.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে জেলা, উপজেলা ও মৌজা নির্বাচন করে দাগ নম্বর বা খতিয়ান নম্বর দিয়ে অনুসন্ধান করলে সহজেই অনলাইনে খতিয়ান পাওয়া যায়।
৩. নাম দিয়ে খতিয়ান নম্বর কীভাবে বের করব?
নাম দিয়ে খুঁজতে হলে ওয়েবসাইটের নাম অনুসন্ধান অপশন ব্যবহার করতে হবে। তবে একই নাম একাধিক থাকায় বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। তাই দাগ নম্বর জানা থাকলে তা ব্যবহার করাই সবচেয়ে নিরাপদ।
৪. ১ একর কত শতাংশ?
বাংলাদেশে ভূমি মাপের হিসেবে ১ একর সমান ১০০ শতাংশ। এই তথ্য জানা জমির হিসাব-নিকাশের জন্য অপরিহার্য।
৫. জমির খতিয়ান ভুল হলে করণীয় কী?
যদি অনলাইনে প্রদর্শিত খতিয়ান বা অফিস থেকে পাওয়া খতিয়ানে ভুল থাকে তবে সংশ্লিষ্ট AC Land অফিসে রেকর্ড সংশোধন মামলার আবেদন করতে হবে।
৬. জমির খতিয়ান চেক করার জন্য কি কি প্রয়োজন?
জেলা, উপজেলা, মৌজা, দাগ নম্বর এবং খতিয়ান নম্বর জানা থাকলে খতিয়ান অনলাইনে সহজেই চেক করা যায়।

উপসংহার

বর্তমান সময়ে জমির খতিয়ান চেক করা আর কোনো জটিল বা সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া নয়। সরকারের ডিজিটালাইজেশনের ফলে এখন কয়েক মিনিটেই অনলাইনে খতিয়ান দেখা সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে, অনলাইনে প্রদর্শিত খতিয়ান কেবল তথ্যের জন্য ব্যবহারযোগ্য। জমির প্রকৃত মালিকানা আইনি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে হবে। তাই জমি কেনা-বেচার আগে বা উত্তরাধিকার সূত্রে ভাগাভাগির আগে খতিয়ান যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। এতে প্রতারণা, বিরোধ এবং ভবিষ্যতের মামলাজনিত ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। আইনজীবীর দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে, প্রতিটি জমির লেনদেনের শুরুতেই অনলাইনে খতিয়ান যাচাই করে নেওয়াই সর্বোত্তম ও নিরাপদ পদক্ষেপ।