The Justice Corner is a leading law firm in Bangladesh, offering specialized legal services to both local and international clients. We serve as trusted advisors to prominent businesses, companies, and banks.

Blog Details

জমির মালিকানা অনলাইনে যাচাই করার সহজ পদ্ধতি

জমির মালিকানা অনলাইনে যাচাই করার সহজ পদ্ধতি

বাংলাদেশে জমি কেনাবেচা বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমির মালিকানা যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। অনেক সময় দেখা যায় জমির দলিল, খতিয়ান বা রেকর্ডে মালিকানার তথ্য সঠিকভাবে মিলে না। এর ফলে ভবিষ্যতে জমি দখল, প্রতারণা বা মামলা-মোকদ্দমার ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই জমির মালিকানা যাচাই কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং আপনার সম্পত্তির নিরাপত্তার অন্যতম প্রধান শর্ত।

বর্তমানে সরকারের ডিজিটাল ভূমি সেবা উদ্যোগের কারণে জমির মালিকানা অনলাইনে যাচাই করা অনেক সহজ হয়েছে। এখন বাড়ি থেকে বসেই জমির মালিকানা রেকর্ড চেক করা যায়, যা সময় ও খরচ দুটোই বাঁচায়।

জমির খতিয়ান অনলাইনে কিভাবে চেক করবেন?
জমির দলিল যাচাই করার নিয়ম ও প্রয়োজনীয় তথ্য
জমির দখল হলে করণীয় ও মামলা করার পদ্ধতি
জমির সঠিক পরিমাপ কিভাবে করবেন (সরকারি পদ্ধতিতে)
জমির নামজারি করার নিয়ম (২০২৫ আপডেট)
জমি সংক্রান্ত মামলা করার নিয়ম এবং খরচ (২০২৫)
জমির খাজনা কিভাবে অনলাইনে দেবেন?

 

জমির মালিকানা যাচাই কেন প্রয়োজন?

জমির মালিকানা যাচাই না করলে যে কোনো ব্যক্তি প্রতারণার শিকার হতে পারেন। নিচে কয়েকটি কারণ দেওয়া হলো কেন এটি অপরিহার্য:

  1. প্রতারণা থেকে সুরক্ষা: অনেক সময় একই জমি একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়। মালিকানা যাচাই করলে এমন প্রতারণা এড়ানো যায়।
  2. আইনি নিরাপত্তা: আদালতে জমির মালিকানা প্রমাণ করতে হলে সরকারি রেকর্ডের প্রয়োজন হয়।
  3. দলিল ও খতিয়ানের মিল: জমির পরিমাণ, দাগ নম্বর এবং মালিকের নাম দলিল ও খতিয়ানে মিল আছে কি না তা নিশ্চিত করা যায়।
  4. উত্তরাধিকার বণ্টন: জমি উত্তরাধিকার সূত্রে বণ্টন করার সময় মালিকানা যাচাই না করলে পরিবারে বিরোধ তৈরি হতে পারে।

 

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করতে কী কী প্রয়োজন?

অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করতে হলে আপনার কিছু তথ্য থাকতে হবে। যেমন:

  • খতিয়ান নম্বর
  • দাগ নম্বর
  • মৌজা নাম ও কোড
  • জমির মালিকের নাম
  • দলিল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন সাল

এসব তথ্য থাকলে সহজেই সরকারি ওয়েবসাইটে গিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করা সম্ভব।

 

জমির মালিকানা যাচাইয়ের সরকারি সাইট ও মাধ্যম

বাংলাদেশে জমির মালিকানা যাচাইয়ের জন্য কয়েকটি সরকারি মাধ্যম ব্যবহার করা যায়।

eporcha.gov.bd থেকে মালিকানা যাচাই

eporcha.gov.bd হলো সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট যেখানে অনলাইনে খতিয়ান, দাগ নম্বর ও মালিকানার তথ্য চেক করা যায়।

পদ্ধতি:

  • ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
  • “খতিয়ান অনুসন্ধান” অপশন সিলেক্ট করুন।
  • মৌজা, জেলা ও দাগ নম্বর লিখুন।
  • মালিকের নাম দিয়ে সার্চ করলে খতিয়ান ও মালিকানা তথ্য পাওয়া যাবে।

Ministry of Land ওয়েবসাইট

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকেও বিভিন্ন সেবা পাওয়া যায়। এখানে অনলাইন আবেদন, মালিকানা তথ্য ও অন্যান্য সার্ভিস নেওয়া সম্ভব।

রেজিস্ট্রেশন অফিসে যাচাই

যদি অনলাইনে তথ্য না পাওয়া যায়, তাহলে স্থানীয় রেজিস্ট্রেশন অফিসে গিয়ে জমির দলিল ও খতিয়ান মিলিয়ে মালিকানা যাচাই করা যায়।

 

জমির মালিকানা ভুল হলে করণীয়

অনেক সময় দেখা যায় জমির খতিয়ান বা মালিকানা রেকর্ডে নামের বানান ভুল থাকে অথবা পূর্বের মালিকের নাম থেকে সংশোধন হয়নি। এমন ক্ষেত্রে যা করতে হবে:

  • ভূমি অফিসে নাম সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিতে হবে (দলিল, খতিয়ান, উত্তরাধিকার সনদ ইত্যাদি)।
  • প্রয়োজনে আদালতে মামলা করে রেকর্ড সংশোধনের নির্দেশ নিতে হবে।

 

বাংলাদেশে অনলাইনে জমির রেজিস্ট্রেশন চেক

জমির রেজিস্ট্রেশন বা দলিল অনলাইনে চেক করার জন্য রেজিস্ট্রেশন বিভাগ ধাপে ধাপে ডিজিটাল সিস্টেম চালু করছে। এখন কিছু জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে দলিল যাচাইয়ের ব্যবস্থা আছে। শিগগিরই সারাদেশে এটি চালু হবে।

এতে করে জমির রেজিস্ট্রি বৈধ কিনা এবং মালিকানা আসলেই বৈধ কিনা তা যাচাই সহজ হবে।

 

জমি রেজিস্ট্রি করার কত দিন পরে মূল দলিল পাওয়া যায়?

জমি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে মূল দলিল সাধারণত ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিস থেকে পাওয়া যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে বিলম্ব হতে পারে। দলিল প্রস্তুত হলে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে।

 

জমির মালিকানা যাচাইয়ে আইনজীবীর ভূমিকা

জমির মালিকানা যাচাই একটি আইনি বিষয়। একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী আপনাকে সাহায্য করতে পারেন:

  1. জমির দলিল ও খতিয়ান মিলিয়ে দেখতে।
  2. মালিকানায় কোনো অসঙ্গতি থাকলে আইনি করণীয় নির্ধারণ করতে।
  3. প্রতারণা বা ভুয়া মালিকানা দাবি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে।

তাই জমি কেনাবেচার আগে বা উত্তরাধিকার বণ্টনের সময় অবশ্যই আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।

FAQ

১. অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করতে টাকা লাগে কি?
না, সরকারি ওয়েবসাইট থেকে মালিকানা যাচাই করতে সাধারণত কোনো ফি লাগে না।
২. জমির মালিকানা চেক করার জন্য কোন ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে হবে?
eporcha.gov.bd এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ব্যবহার করা যায়।
৩. দলিল ও খতিয়ানের মালিকানা যদি না মেলে তাহলে কী করবেন?
ভূমি অফিসে আবেদন করতে হবে অথবা প্রয়োজনে আদালতে মামলা করতে হবে।
৪. জমি রেজিস্ট্রি করার কত দিন পরে মূল দলিল পাওয়া যায়?
সাধারণত ২-৩ মাসের মধ্যে মূল দলিল রেজিস্ট্রি অফিস থেকে পাওয়া যায়।
৫. মালিকানা যাচাই ছাড়া জমি কেনা কি ঝুঁকিপূর্ণ?
হ্যাঁ, এতে প্রতারণা ও আইনি ঝুঁকি রয়েছে। তাই যাচাই ছাড়া জমি কেনা উচিত নয়।

 

উপসংহার

বাংলাদেশে জমির মালিকানা যাচাই এখন আর জটিল কোনো প্রক্রিয়া নয়। সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খুব সহজে অনলাইনে জমির খতিয়ান ও মালিকানা দেখা যায়। তবে কোনো অসঙ্গতি থাকলে অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। জমি কেনাবেচা বা হস্তান্তরের আগে মালিকানা যাচাই করা প্রতিটি নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একজন আইনজীবীর পরামর্শে মালিকানা যাচাই করলে প্রতারণার হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায় এবং ভবিষ্যতের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়।